কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে গণমিছিল, সমাবেশ, পদযাত্রা ও দোয়া মাহফিল। শুক্রবার (২ আগস্ট) বৃষ্টির মধ্যে এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছে।কোথাও কোথাও পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হয়েছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচির ডাকে সাড়া দিয়ে দুপুরে জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। জুমার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে হাইকোর্ট এলাকা ঘুরে শাহবাগ পর্যন্ত মিছিল করেছে দিকে কয়েকশ মানুষ।
শাহবাগে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর মিছিল করে তারা প্রেস ক্লাবে যান। সেখানে প্রায় তিন হাজার মানুষের জমায়েত হয়। প্রেস ক্লাবে কর্মসূচি শেষে বিশাল মিছিল নিয়ে শিক্ষা ভবনের সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে রাজু ভাস্কর্য হয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন হাজারো বিক্ষোভকারী। এ সমাবেশ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবক, অধিকারকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। হাজারো মানুষের স্লোগানে শহীদ মিনার প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে আছে।
এদিন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর উত্তরা, হবিগঞ্জ, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, নরসিংদী ও ঝিনাইদহে। এছাড়া দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শিক্ষার্থীরা গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। তারা শিক্ষার্থীদের দেওয়া নয় দফা মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। কোথাও কোথাও সরাসরি সরকারের পদত্যাগও দাবি করা হয়।
খুলনায় শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ
খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে বিশাল মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা গল্লামারী পৌঁছালে জিরোপয়েন্টের দিকে থেকে পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে টিয়ারসেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের যোগ দিতে দেখা যায়। পরে বিপুলসংখ্যক আন্দোলনকারী মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেলে পুলিশ ধীরে ধীরে পিছু হটে যায়। পরে তারা জিরোপয়েন্টে অবস্থান নেয়।
সেখানে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়া নিয়ে বিকাল ৪টার দিকে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে জিরো পয়েন্ট মোড়ে অবস্থান নেয় কিছু শিক্ষার্থী। তাদের দুই পাশ দিয়ে ঘিরে রাখে পুলিশ। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশ একের পর এক টিয়ালসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
সিলেটে ব্যাপক সংঘর্ষ, আহত ২০
সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা পেরিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিক ও পথচারী আহত হন। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করেছে।
চট্টগ্রামে পুলিশ বক্স ভাঙচুর
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ‘ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতার গণমিছিলটি’ ওয়াসা এলাকায় পৌঁছলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের বাধার মুখে পড়ে। স্লোগান-পাল্টাস্লোগানের এক পর্যায়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সাঁজোয়া যানে ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটে, ভাঙচুর করা হয় পুলিশ বক্স। শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহমেদ বলেন, ওয়াসার মোড়ে অবস্থিত পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়েছে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। পরে সেটি ওয়াসা থেকে আলমাস সিনেমা হলের দিকে সরে যায়। তখন বেলা পৌনে চারটা। এতে কেউ আহত হয়নি। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।
লক্ষ্মীপুরে গণমিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা
লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলায় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান এবং এতে প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন। শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।
নরসিংদীতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে বাধা, সংঘর্ষ
নরসিংদীতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যা ও গণগ্রেফতার, শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার গণমিছিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অংঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অংঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেল ৩টায় নরসিংদী সদর উপজেলা মোড় এলাকার নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় ডিবি পুলিশ, থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে আগে থেকে ছাত্রলীগ নরসিংদী উপজেলা মোড় এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেয়। পরে দুপুর পৌনে তিনটা নাগাদ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে উপজেলা মোড় এলাকায় প্রবেশ করলে প্রথমেই পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে সেখানে একে একে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অংঙ্গসংগঠের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের বাধা দিতে গেলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে ৪/৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। আহতদের নরসিংদীসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। বিক্ষোভকারীরা পরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড়ে অবস্থান নেয়।
ঝিনাইদহে পুলিশের লাঠিচার্জে ৫ শিক্ষার্থী আহত
৯ দফা দাবি আদায়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গণপদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এসময় পুলিশের লাঠির আঘাতে ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ সময় ৫ ছাত্রকে আটক করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শহরের সরকারি মাহতাবউদ্দিন কলেজ মাঠে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশের লাঠির আঘাতে ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পুলিশ ৫ জন সাধারণ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। পরে তারা শহরের নলডাঙ্গা ভ্যানস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এসময় বক্তারা আটক শিক্ষার্থীদের ১২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তির আলটিমেটাম দেয়।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আজিফ জানান, শিক্ষার্থীদের মিছিল করতে নিষেধ করা হয়েছিল। তারা নিষেধ না শোনায় পুলিশ ৫ জনকে হেফাজতে নিয়েছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।